নীল বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো।

© ABHISEK DUTTA

Posted & Written by- Abhisek Dutta(Assistant Teacher)

বিষয়ঃ ইতিহাস * শ্রেণিঃ দশম

অধ্যায়ঃ তৃতীয়- প্রতিরোধ ও বিদ্রোহঃ বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ।

প্রশ্নঃ নীল বিদ্রোহের কারণ, ফলাফল, গুরুত্ব ও বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো। [Marks-08]




 [নীল বিদ্রোহ (1859-60 খ্রিঃ)]

 নীল চাষ ছিল ভারতের একটি প্রাচীনতম চাষ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে ক্ষমতা বিস্তার করতে শুরু করলে ব্রিটিশ বণিকরা বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে নীল চাষ শুরু করে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নীলকর সাহেবদের সীমাহীন লোভ, শোষণ ও নির্মম অত্যাচারের বিরুদ্ধে নীল চাষিরা বিষ্ণুচরন বিশ্বাস দিগম্বর বিশ্বাস এর নেতৃত্বে নীল বিদ্রোহ(1859-60 খ্রিঃ) ঘোষণা করে। নদীয়া জেলার চৌগাছা গ্রামে এই বিদ্রোহ শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দিনাজপুর, পাবনা, যশোহর রাজশাহী ময়মনসিংহ প্রভৃতি অঞ্চলে।


নীল বিদ্রোহের বিভিন্ন স্থান


* নীল বিদ্রোহের কারণঃ বাংলায় নীল বিদ্রোহের কারণগুলি হল-


i) দাদন প্রথাঃ নীলকররা চাষীদের নীল চাষের জন্য অগ্রিম টাকা দিত। এই অগ্রিম টাকাকেই দাদন বলা হয়। চাষিরা অসুবিধায় পড়ে দাদন নিত। মাত্র দু টাকার বিনিময় চাষি তার উৎকৃষ্ট একবিঘা জমিতে নীল চাষ করতে বাধ্য হত। একবার কোন চাষী দাদন নিলে সারাজীবনেও তা পরিশোধ হত না। 


ii) নীলকরদের অত্যাচারঃ নীলকররা চাষীদের উপর ব্যাপক অত্যাচার করত। নীলকর সাহেবদের লাঠিয়াল বাহিনী চাষীদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিত, তাদের স্ত্রী-কন্যাদের অপহরণ ও অসম্মান করত। চাষীদের উপর দৈহিক অত্যাচার চালানো হতো। চাষীদের গবাদি পশু নিয়ে চলে যেত লাঠিয়াল বাহিনী। যত দিন যাচ্ছিল অত্যাচারের মাত্রা বেড়েই চলেছিল।


iii) প্রতারনা ও অলাভজনক চাষঃ  নীলকর সাহেবরা কৃষকদের সাথে বিভিন্ন ভাবে প্রতারণা করত। উৎপাদিত নীলের দাম অত্যন্ত কম দেয়া হতো এবং তা খারাপ মানের বলে চাষীকে বাধ্য করা হতো নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে। আবার জমি মাপের সময়ে ব্যাপক কারচুপি করা হতো। প্রায় আড়াই বিঘা জমি কে এক বিঘা বলত। ফলে চাষী নীল চাষ করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতো। এই নীলচাষ একটি অলাভজনক চাষ এ পরিনত হয়। ফলে চাষীদের আর্থিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে।

    

iv) পঞ্চম আইনঃ 1830 খ্রিষ্টাব্দে লর্ড বেন্টিং প্রবর্তিত পঞ্চম আইনে বলা হয় দাদন না নিয়ে নীল চাষ করলে তা বেআইনি বলে ঘোষণা করা হবে উৎপাদিত ফসল বিক্রি করা যাবে না এবং নির্দিষ্ট চাষীকে নিষিদ্ধ  চাষের জন্য জেলে ভরা হবে। এর ফলে চাষীরা দাদন নিতে বাধ্য হয় এবং নীলচাষ তাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।

v) অব্যবস্থা ও অবিচারঃ  নীল বিদ্রোহের পূর্বে নীরা নীলকররা  ব্যাপক অব্যবস্থা তৈরি করেছিল। নীলকরদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ চাষীরা প্রশাসনের দ্বারস্থ হলে সুবিচার পেতে না উল্টে তাদের নানাভাবে হেনস্থা করা হতো। এর ফলে চাষিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিল।


vi) বিভিন্ন পত্রিকা ও বিদ্রোহের প্রভাবঃ নীল বিদ্রোহের জন্য অন্যতম ভূমিকা অবলম্বন করেছিল তৎকালীন সময়কার বিভিন্ন পত্রপত্রিকা। হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদিত হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকায় নিয়মিত নীলচাষীদের উপর হওয়া অত্যাচার ছাপা হতো। দীনবন্ধু মিত্রে র লেখা নীলদর্পণ নাটকে নীলকর সাহেবদের ভয়ঙ্কর অত্যাচার তুলে ধরা হয়। সেই সময় শিক্ষিত সচেতন মানুষদের নীলচাষীদের সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল।

নীল বিদ্রোহের পূর্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিদ্রোহ (সাঁওতাল বিদ্রোহ, মহাবিদ্রোহ) থেকে চাষীরা অনুপ্রাণিত হয়েছিল।


* নীল বিদ্রোহের গুরুত্ব/ফলাফলঃ নীল বিদ্রোহের ফলাফল হলো-

i) নীল কমিশনঃ নীল বিদ্রোহের ফলে 1860 খ্রিষ্টাব্দের 31 ডিসেম্বরে নীল কমিশন গঠন করা হয়। 1868 খিষ্টাব্দে অষ্টম আইন দ্বারা 'নীলচুক্তি আইন' বাতিল করে নীল চাষ কি ইচ্ছাধীন চাষে পরিণত করা হয়। এর ফলে নীলকররা বাংলা ছেড়ে বিহার ও পার্বত্য অঞ্চলে চা চাষের জন্য অর্থ বিনিয়োগ করতে শুরু করে।


ii) জাতীয়তাবোধঃ নীল বিদ্রোহের সাফল্য শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালীদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের জাগরণ ঘটিয়েছিল। শিশির কুমার ঘোষ বলেছিলেন "এই নীল বিদ্রোহ সর্বপ্রথম  দেশের লোককে রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তার শিক্ষা দেয়।"


iii) মহাজনদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাঃ নীল বিদ্রোহে সাফল্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো নীলকরদের পতন এবং মহাজন' শ্রেণীর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা। পরবর্তীকালে কৃষকদের জমির কর্তৃত্ব লোভী সুদখোর মহাজনকে হাতে চলে যায়।


* নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যঃ নীল বিদ্রোহের বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ-


i) নীলকর বিরোধী বিদ্রোহঃ নীল বিদ্রোহ ছিল পুরোপুরি ভাবে নীলকরদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। কৃষকদের আক্রমণের মূল লক্ষ্য ছিল নীলকর সাহেব নীলকুঠি গুলি। এই বিদ্রোহের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল নীলকরদের অত্যাচার এবং নীলচাষের অবসান।


ii) কৃষক বিদ্রোহঃ নীল বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণরূপে একটি কৃষক বিদ্রোহ। কৃষকদের কঠোর মনোভাব নীলচাষ না করার জন্য সমগ্র কৃষক সম্প্রদায়কে একত্রিত করে তুলেছিল।


iii) প্রথম ধর্মঘট এর প্রয়োগঃ এল  নটরাজন এর মতে নীলচাষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে করতে গিয়ে ভারতের ইতিহাসে কৃষকরা সর্বপ্রথম ধর্মঘট করেছিলেন। 


iv) ধর্মনিরপেক্ষ বিদ্রোহঃ নীল বিদ্রোহ ছিল সম্পূর্ণরূপে ধর্মনিরপেক্ষ একটি বিদ্রোহ। এরপূর্বে ভারতে ঘটে যাওয়া যেসকল বিদ্রোহ গুলি ছিল সেগুলি মূলত কোন না কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের  নিজস্ব ধর্মীয় চিন্তাভাবনার দ্বারা প্রভাবিত ছিল।


v) খ্রিস্টান মিশনারীদের সমর্থনঃ নীল বিদ্রোহের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল বিদ্রোহীদেরকে খ্রিস্টান মিশনারীদের সমর্থন। খ্রিস্টান মিশনারীরা ব্রিটিশ হলেও নীলকরদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করেন।


                           পরিশেষে কথা বলা যায় নীল বিদ্রোহ ছিল ভারতবর্ষের প্রথম সফল বিদ্রোহ। নীলচাষীদের আন্দোলন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত বাঙালি সম্প্রদায় তথা ভারতবাসী সামনে ব্রিটিশদের অত্যাচার তুলে ধরতে সক্ষম হয় আর চাষীদের  এই সংগ্রাম ভারতীয়দের মনে জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটায় যা পরবর্তীকালে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের পথ সুগম করে। 

PDF COPY পাওয়ার জন্য EMAIL ID কমেন্ট BOX দিন।

আরও অনেক প্রশ্ন উত্তর পাওয়ার জন্য এই ব্লগটি ফলো করুন।

এই বিষয়টি বিস্তারিত জানতে নিচের লিঙ্কে ক্লিক করুন👇👇👇👇👇

https://www.youtube.com/watch?v=sZOVmTOFZ_E&t=42s

THANK YOU FOR VISITING MY BLOG

Comments

  1. দারুণ স্যার

    ReplyDelete
  2. খুব ভালো হয়েছে

    ReplyDelete
  3. ভালো হয়েছে

    ReplyDelete
  4. nice ( sadhan700121@gmail.com)

    ReplyDelete
  5. 10110010hacker@gmail.com
    eta amer email id
    send me pdf I like this answer

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।

অষ্টম শ্রেণির পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয় তাপের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ। অধ্যায়-পঞ্চম * শ্রেণি-অষ্টম * বিষয় পরিবেশ ও বিজ্ঞান।