পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ অধ্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর সপ্তম শ্রেণি পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়।

 পরিবেশের সংকট, উদ্ভিদ ও পরিবেশের সংরক্ষণ।

অধ্যায়-সপ্তম * বিষয়-পরিবেশ ও বিজ্ঞান * শ্রেণি-সপ্তম।







১) আবহাওয়া কাকে বলে?


উঃ কোন একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের সর্বদা পরিবর্তনশীল, গতিময় বায়ুমণ্ডলীয় অবস্থানকে আবহাওয়া বলে।



২) জলবায়ু কাকে বলে?


উঃ কোন বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নির্দিষ্ট সময়ের আবহাওয়ার গড় অবস্থানকে জলবায়ু বলা হয়। জলবায়ু  প্রকৃতিতে স্থায়ী হয় এবং সাধারণত তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটে না।



৩) গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে? বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফলগুলি লেখো।


উঃ বিশ্ব উষ্ণায়নঃ বায়ুমন্ডলের পুরু গ্যাসীয় পদার্থের স্তর ভেদ করে বিকিরিত তাপ মহাকাশে ফিরে যেতে না পেরে ভূপৃষ্ঠে আবদ্ধ হয় এবং এর ফলে সমস্ত পৃথিবীতে যে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা যুক্ত অবস্থা তৈরি হয় তাকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলে।


বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফলঃ 

ক) হিমবাহ ও মেরু প্রদেশের বরফ গলে সমুদ্রের জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে ফলে সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশ ও অঞ্চলগুলি জলের নিচে ডুবে যাবে।

খ) বরফগলা জলে পুষ্ট নদীগুলি ধীরে ধীরে শুকিয়ে যাবে।

গ) বায়ুমণ্ডলীয় চাপের পরিবর্তনের ফলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঝড়, বন্যা, খরা, নিম্নচাপের প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।

ঘ) জল চক্র ব্যাহত হবে এবং বনাঞ্চলের আয়তন ক্রমশ কমতে থাকবে।

ঙ) ফসল উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

চ) জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হবে মেরু প্রদেশের প্রাণী অস্তিত্ব বিপন্ন হবে।

ছ) ভূগর্ভস্থ জল দূষিত হবে ও ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পাবে। 

জ) নানাবিধ রোগ ব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে।



৪) পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি হ্রাসের উপায় গুলি কী কী?


উঃ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি হ্রাসের উপায় গুলি হল-

ক) প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে শক্তি উৎপাদন বন্ধ করে অচিরাচরিত পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

খ) বায়ু দূষণের জন্য দায়ী গ্যাস গুলি এবং গ্রিন হাউস গ্যাস গুলি যাতে বায়ুমন্ডলে মিষ্টি না পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

গ) বনসৃজন করে বনভূমির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে সেইসঙ্গে অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করতে হবে।

ঘ) এসি, ফ্রিজে সিএফসি পরিবর্তে অন্য কোন বিকল্প গ্যাসের ব্যবহার করতে হবে।

ঙ) পেট্রোল ডিজেল চালিত যানবাহন এর পরিবর্তে ব্যাটারি চালিত পরিবেশবান্ধব গাড়ি ব্যবহার বাড়াতে হবে।

চ) নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার কমিয়ে পুলকার সিস্টেম চালু করতে হবে বা গণপরিবহন বেশি করে ব্যবহার করতে হবে।

ছ) বিদ্যুৎ শক্তির অপচয় রোধ করতে হবে।

জ) বায়ুকল, সোলার কুকার, সোলার হিটার, সোলার চার্জার এর ব্যবহার বাড়াতে হবে।

ঝ) জনসাধারণকে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও তার প্রভাব সম্বন্ধে অবহিত করতে হবে। এর জন্য ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে।

বায়ুকল



৫) জীববৈচিত্র্য কাকে বলে? জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদ গুলি আলোচনা করো।


উঃ জীববৈচিত্র্যঃ বিভিন্ন প্রকার বাস্তুতন্ত্রের বা পরিবেশে বা বাসস্থানে বসবাসকারী সমস্ত জীবের মধ্যে বিভিন্নতা বর্তমান, তাকে জীববৈচিত্র্য বা বায়োডাইভারসিটি বলে। বিজ্ঞানী ডাবলু জি রোসেন ১৯৮৫ সালে প্রথম বায়োডাইভারসিটি শব্দটি প্রবর্তন করেন।


জীববৈচিত্র্যের প্রকারভেদঃ জীব বৈচিত্র্য কে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়। যথা-

ক) জিনগত বৈচিত্র্যঃ জীবের প্রতিটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য জিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। জিনের বিভিন্নতার ওপর ভিত্তি করে জীবের মধ্যে, যে বৈচিত্র্য দেখা যায়, তাকে জিনগত বৈচিত্র্য বলে।


খ) প্রজাতি বৈচিত্র্যঃ কোন ভৌগলিক অঞ্চলে যত প্রকারের প্রজাতি থাকে, তাকে প্রজাতি বৈচিত্র্য বলে।


গ) বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র্যঃ বিভিন্ন বাস্তুতন্ত্রের বিভিন্ন রকমের জীব সম্প্রদায় বসবাস করে। বাস্তুতন্ত্রের অজৈব উপাদানের প্রকৃতি অনুযায়ী জীবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যেরও বিভিন্নতা দেখা যায়। একে বাস্তুতান্ত্রিক বৈচিত্র বলে। 

এটি আবার তিন প্রকার। যথা-

অ) আলফা বৈচিত্র্য

আ) বিটা বৈচিত্র্য

ই) গামা বৈচিত্র্য।



৬) প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে? জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রবাল প্রাচীর এর গুরুত্ব কী?


উঃ প্রবাল প্রাচীরঃ একসঙ্গে পাস করা অনেক প্রবালের দেহের বাইরে থাকা ক্যালসিয়াম কার্বনেটের বহিঃকঙ্কাল যে শক্ত পাখির মতো গঠন করে তাকে প্রবাল প্রাচীর বলে।


জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রবালপ্রাচীর এর গুরুত্বঃ পৃথিবীর সমুদ্রতলের প্রায় ০.১% স্থান দখল করে থাকা প্রবালপ্রাচীর প্রায় ২৫% সামুদ্রিক প্রজাতির জীবের আশ্রয়স্থল। মাছ,   মোলাস্কাজাতীয়  প্রাণী, একাইনোডারমাটা, স্পঞ্জ, ক্রাস্টেশিয়া প্রতিটি বহু প্রাণী আশ্রয়স্থল এই প্রবালপ্রাচীর। জীববৈচিত্র্য ধারণ করার ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া মৃত প্রবালের কঙ্কাল থেকে বিভিন্ন সৌখিনদ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।

প্রবালপ্রাচীর



৭) জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কিভাবে জীবের অস্তিত্ব বিপন্ন হচ্ছে তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো।


উঃ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জীবের পরিচিত পরিবেশ আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়। কিছু প্রাণীরা এই অপরিচিত পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে বেঁচে থাকার চেষ্টা করে। যেসব প্রাণীরা এই পরিবর্তিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারে না তাদের অস্তিত্ব সংকট পূর্ণ হয়ে যায়। যেমন-

* মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়ার জন্য মেরু ভল্লুক, এম্পেরর পেঙ্গুইন, মেরু শেয়াল প্রভৃতি প্রাণী অস্তিত্ব বিপন্ন।

* মহাসাগরের জলের অম্লতা তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে ধ্বংস হচ্ছে কোরাল রিফ।

* পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ইউক্যালিপটাস পাতা খাদ্যগুণ কমে যাচ্ছে ফলে অস্ট্রেলিয়ার কোয়ালা নামক প্রাণী খাদ্য সমস্যায় ভুগছে।

পেঙ্গুইন



৮) পরিবেশ দূষণ কিভাবে জীববৈচিত্র্য কে ধ্বংস করছে?


উঃ পরিবেশ দূষণের ফলে জীববৈচিত্র্য আজ ক্রমশ কমতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের বিভিন্ন কার্যকলাপ এই পরিবেশ দূষণ ও জীববৈচিত্র্য হ্রাসের জন্য দায়ী। যেমন-

* চাষের জমিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন কীটনাশক একদিকে যেমন ক্ষতিকারক কীটপতঙ্গের প্রাণনাশ করছে অন্যদিকে তেমনি উপকারী কীটপতঙ্গের‌ও ( প্রজাপতি মৌমাছি ফড়িং প্রভৃতি) ক্ষতি করছে। ফলে বাস্তুতন্ত্রের খাদ্যের অভাবে পতঙ্গভুক পাখি ও ব্যাঙের সংখ্যা মাত্রারিক্ত ভাবে কমে গিয়েছে।

* উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন নদীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ এসে পড়ায় প্রচুর মাছের ও জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটছে।

* শিল্প ও কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বর্জ্যপদার্থ গঙ্গার জলে জমা হয়ে ব্যাপক দূষণ সৃষ্টি করছে ফলে গঙ্গার শুশুক ও বহু জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।

শুশুক



৯) পশ্চিমবঙ্গের কোথায় ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়? এই সমস্ত অরণ্যের বৈশিষ্ট্য কী?


উঃ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ 24 পরগনা জেলা দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্যঃ ক) উদ্ভিদ অতিরিক্ত লবণাক্ত মাটিতে জন্মায়।

খ) উদ্ভিদগুলি শ্বাসমূল, অধিমূল ও ঠেসমূল যুক্ত হয়।

গ) গরান, গেঁওয়া প্রভৃতি উদ্ভিদে জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম ঘটে।

ঘ) হেঁতাল নামক খেজুর জাতীয়  গাছ পাঁকজলে ঘন জঙ্গল তৈরি করে।

সুন্দরবন



১০) শব্দ দূষণের ফলে মানব দেহে কী কী সমস্যা দেখা যেতে পারে?


উঃ শব্দ দূষণের ফলে মানব দেহে যে সমস্ত সমস্যাগুলি দেখা যায় তাহল-

ক) তীব্র মাথা যন্ত্রণা ও অনিদ্রা

খ) স্নায়ু সমস্যা, মানসিক অবসাদ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া।

গ) কাজের একাগ্রতা নষ্ট হওয়া।

ঘ) হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পাওয়া।

ঙ) বধিরতা সৃষ্টি হওয়া।

শব্দ দূষণের একটি কারণ



১১) বর্তমানে অবলুপ্ত তিনটি প্রাণীর নাম লেখো।


উঃ * মরিশাসের ডোডো পাখি

* আইসল্যান্ডের আউক পাখি।

* উত্তর আমেরিকার বাইসন।


১২) ভারতের তিনটি লুপ্তপ্রায় প্রাণীর নাম লেখো।


উঃ * রয়েল বেঙ্গল টাইগার

* গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড

* ঘড়িয়াল।

ঘড়িয়াল


১৩) পরিবেশ কাকে বলে?


উঃ আমাদের চারপাশে অবস্থিত বিভিন্ন ধরনের জড়বস্তু এবং সজীব বস্তু ও তাদের পারস্পরিক সম্পর্কে যে জগৎ গড়ে ওঠে তাকে পরিবেশ বলে।


১৪) পৃথিবীর ঘোমটা কাকে বলে? 


উঃ পৃথিবীতে সূর্যালোক আপতিত হলে তা তাপশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এই তাপকে ধরে রাখতে পৃথিবীর চারপাশে বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, জলীয় বাষ্প, ভাসমান কণা একটি গ্যাসীয় পদার্থের স্তর গঠন করে। এই বিশেষ প্রকার গ্যাসীয় আবরণ বা স্তরকে পৃথিবীর ঘোমটা বলে।



১৫) ভারতবর্ষে অবস্থিত দুইটি বায়োডাইভারসিটি হটস্পট এর নাম লেখো।


উঃ পূর্ব হিমালয় এবং সুন্দাল্যান্ড।



Posted by- Abhisek Dutta

                    Assistant Teacher


© ABHISEK DUTTA


Picture Collected from- Google


Thank You for Visiting my Blog.



Comments

  1. Tobe banan majhe majhe ektu vul ache but very nice

    ReplyDelete
  2. অসংখ্য ধন্যবাদ। চেষ্টা করবো ভুল গুলো সংশোধন করার।

    ReplyDelete
  3. নবম শ্রেণির জীবনবিজ্ঞানের কিছু প্রশ্নপত্র হলে ভালো হতো

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

নবম শ্রেণির ইতিহাস প্রথম অধ্যায়- ফরাসি বিপ্লবের কয়েকটি দিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর।

অষ্টম শ্রেণির পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয় তাপের গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ। অধ্যায়-পঞ্চম * শ্রেণি-অষ্টম * বিষয় পরিবেশ ও বিজ্ঞান।