প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ। অধ্যায়-পঞ্চম * শ্রেণি-অষ্টম * বিষয় পরিবেশ ও বিজ্ঞান।
অধ্যায়-পঞ্চমঃ প্রাকৃতিক ঘটনা ও তার বিশ্লেষণ।
শ্রেণি-অষ্টম * বিষয় পরিবেশ ও বিজ্ঞান।
অভিষেক দত্ত
সহঃ শিক্ষক
ডাঃ সুধাকৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয় (উঃ মাঃ)
1) পেন্টোগ্রাফ কি?
উঃ বৈদ্যুতিক ট্রেনের উপরে থাকা যে ত্রিভুজাকৃতি ধাতব পাত উচ্চ বিভবযুক্ত ওভারহেড তারে সাথে ট্রেনের তড়িৎ সংযোগ তৈরি করে, তাকে পেন্টোগ্রাফ বলে।
2) আয়ন কাকে বলে? ধনাত্মক আয়ন (+) এবং ঋণাত্মক (-) আয়ন কিভাবে গঠিত হয়?
উঃ যদি কোন কারনে কোনো পরমাণুতে প্রোটনের সংখ্যা ও ইলেকট্রন এর সংখ্যা সমান না থাকে, তাহলে সেই পরমাণুকে আয়ন বলা হয়।
ধনাত্মক (+) আয়ন বা ক্যাটায়নঃ কোনো পরমাণু থেকে এক বা একাধিক ইলেকট্রন বেরিয়ে গেলে পরমাণুটিতে ইলেকট্রন সংখ্যার তুলনায় প্রোটন সংখ্যা বেশি হয়ে যায়। তখন পরমাণুটি ধনাত্মক (+) আয়ন ও ক্যাটায়ন এ পরিণত হয়।
ঋণাত্মক আয়ন (-) বা অ্যানায়নঃ কোনো পরমাণুতে এক বা একাধিক ইলেকট্রন যুক্ত হলে পরমাণুটিতে প্রোটন সংখ্যার তুলনায় ইলেকট্রন সংখ্যা বেশি হয়ে যায়। তখন পরমাণুটি ঋণাত্মক (-) আয়নে বা অ্যানায়নে পরিণত হয়।
3) বায়ুমন্ডলে প্রচুর পরিমাণে তড়িৎযুক্ত বা তড়িৎগ্রস্ত আয়ন ও পরমাণুর জোট, সূক্ষ্ম ধূলিকণা বা জলকণা ছড়িয়ে রয়েছে। বায়ুমন্ডলে এরা এলো কিভাবে?
উঃ ধনাত্মক আয়ন গঠনের সময় পরমাণু থেকে বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রন অন্য কোনো পরমাণু বা পরমাণু জোটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের ঋণাত্মক (-) আধানগ্রস্ত করে দেয়। আবার এই বেরিয়ে যাওয়া ইলেকট্রন অথবা অন্য কোনো আয়ন অনেকসময় বায়ুতে ভাসমান খুব সূক্ষ্ম ধূলিকণা বা জলকণার গায়ে আশ্রয় নিতে পারে। ফলস্বরূপ সেই কণাটিও তখন তড়িৎগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এইভাবে বায়ুমন্ডলে তড়িৎযুক্ত বা তড়িৎগ্রস্ত আয়ন, পরমাণুর জোট, ধূলিকণা বা জলকণার সৃষ্টি হয়।
4) শীতকালে চুল আঁচড়ানোর ফলে প্লাস্টিকের চিরুনিতে কি প্রকার তড়িদাধান জমে? এই ঘটনাটি থেকে 'তড়িৎ আবেশ' ও 'আধান ক্ষরণ' হওয়া ব্যাখ্যা করো।
উঃ শীতকালে প্লাস্টিকের চিরুনি দিয়ে শুকনো চুল আঁচড়ালে চিরুনিতে ঋণাত্মক(-) তড়িদাধান জমে।
# এই অবস্থায় চিরুনিটিকে ছোটো ছোটো কাগজের টুকরোর কাছে নিয়ে গেলে কাগজের টুকরো আকৃষ্ট হয়। আহিত চিরুনির প্রভাবে কাগজের টুকরোর যে দিকটি চিরুনির কাছে আছে সেই অংশে ধনাত্মক (+) আধান জমে। একেই তড়িৎ আবেশ বলে।
চুল আঁচড়ে চিরুনিটিকে বেশ কিছুক্ষণ রেখে দিলে, চিরুনির আকর্ষণ ধর্ম থাকে না বললেই চলে। সময় যথেষ্ট বেশি হলে চিরুনির আধান হয় বাইরে বেরিয়ে যায়, নয় বাইরে থেকে বিপরীত আধান চিরুনিতে চলে আসে। এই ঘটনায় হলো চিরুনির আধান ক্ষরণ হওয়া।
5) LED র পুরো অর্থ কি?
উঃ Light Emitting Diode.
6) প্রাকৃতিক তড়িৎপ্রবাহ কাকে বলে?
উঃ বায়ুমন্ডলে ভাসমান আধানযুক্ত সূক্ষ্ম ধূলিকণা, বিভিন্ন আয়ন ও জলীয় বাষ্পের অবিরাম নিম্ন অভিমুখী প্রবাহের ফলে ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুর মধ্যে দিয়ে সারাক্ষণই যে তড়িৎপ্রবাহ হয়, তাকে প্রাকৃতিক তড়িৎপ্রবাহ বলে।
7) প্রাকৃতিক তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টির কারণ কী?
উঃ প্রায় 50 কিলোমিটার উপরের আকাশ আর ভূপৃষ্ঠের মধ্যে প্রায় চার লক্ষ ভোল্ট পার্থক্য আছে। এই বিভব পার্থক্যের জন্যই বায়ুতে উপস্থিত আধানযুক্ত সূক্ষ্ম ধূলিকণা ও বিভিন্ন আয়ন অবিরাম চলাচল করে। ফলে প্রাকৃতিক তড়িৎপ্রবাহ হয়।
8) ঝড়ের মেঘের উচ্চতা 12-13 কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি হয় কেন?
উঃ বায়ুমণ্ডলের উপরের দিকে বায়ুর উষ্ণতা ও চাপ কম থাকায় জলীয় বাষ্পভরা বায়ু উপরে উঠে ঠান্ডা হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প জমে জলকণা তৈরি হয়। বায়ু জমে জল হলে লীন তাপ বেরিয়ে আসে। এই লীন তাপের প্রভাবে বাষ্প ও জল ভরা বায়ু আশেপাশের বায়ুর তুলনায় গরম ও হালকা থাকে। এইজন্য এই বায়ু আরো উপরে উঠতে থাকে। তাই ঝড়ের মেঘের উচ্চতা 12 - 13 কিলোমিটার বা তার চেয়েও বেশি হয়।
9) ভূপৃষ্ঠে ঝড়-বৃষ্টি কিভাবে শুরু হয়?
উঃ সূর্যের তাপে ভূপৃষ্ঠের কোন বিস্তৃত অঞ্চলের জলীয় বাষ্প ভরা বায়ু উপরের দিকে উঠতে থাকে। আশেপাশের অঞ্চল থেকেও বায়ু ওই অঞ্চলের দিকে ছুটে আসে ও উপরের দিকে উঠতে থাকে। ওপরের বায়ুর উষ্ণতা উচ্চচাপ অপেক্ষাকৃত কম থাকায় জলীয় বাষ্প ভরা বায়ু ওপরে উঠে শীতল হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্প জমে জলকনা তৈরি হয়। বাষ্প জমে জল হলে লীন তাপ নির্গত হয়। এই লীন তাপের প্রভাবে বাষ্প ও জলঘকনা পূর্ণ বায়ু আশেপাশের বায়ুর তুলনায় গরম ও হালকা হয়ে আরো উপরে উঠতে থাকে। একসময় জলকণাগুলি এতটাই ভারী হয়ে যায় যে বায়ুমন্ডলে আর ভেসে থাকতে পারেনা, মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে নিচে নামতে থাকে বায়ুর ঊর্ধ্বমুখী গতিও জলকণাগুলির নিচে পড়া আটকাতে পারেনা। এই অবস্থায় ঝড়ের মেঘের গঠন সম্পূর্ণ হয়। একটা সময় পরে বায়ুও হঠাৎ করে নিচে নামতে শুরু করে। এর ফলে ভূপৃষ্ঠে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়।
10) ঝড়ের মেঘের উপরে ওঠা বা নিচে নামার সময় জল কনা গুলি তড়িৎগ্রস্ত হয় কিভাবে?
উঃ বায়ুতে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের আহিত কণা জল কনার গায়ে জমে জলকণাগুলিকে তড়িৎগ্রস্ত করে। যে জলকণাগুলি নিচের দিকে নামছে সেগুলোই সাধারণত ঋণাত্মক (-) আধান জমা হয়, আর যে জলকণাগুলি উপরের দিকে উঠছে সেগুলোই ধনাত্মক (+) আধান জমে।
11) বজ্রপাত কিভাবে ঘটে?
উঃ সাধারণ সময় মাটি ঋণাত্মক (-) তড়িৎগ্রস্ত হলেও ঝড়ের মেঘের নীচের দিক প্রবল ঋণাত্মক (-) তড়িৎগ্রস্ত হওয়ায় আবেশ এর ফলে মাটিতে ধনাত্মক (+) তড়িৎ জমে। এইভাবে তড়িৎ জমতে জমতে মেঘ ও মাটির বিভবপার্থক্য খুব বেশি হলে অত্যন্ত বড় স্ফুলিঙ্গের আকারে ঋণাত্মক তড়িৎ আধান মেঘ থেকে মাটিতে চলে আসে। এর ফলে ক্ষণস্থায়ী কিন্তু প্রবল তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। এটি হলো বজ্রপাত। এর ফলে বায়ু অত্যন্ত গরম হয়ে ওঠে এবং আলো বিকিরণ করে। এই সময় বাতাসে সাময়িক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। এজন্যই বায়ুতে প্রবল কম্পন তৈরি হয় বজ্রপাতের সময় শব্দ উৎপন্ন করে।
12) বজ্র নিরোধক কী?
উঃ বজ্র নিরোধক হল ধাতুর তৈরি একটি সরু শক্ত দণ্ড, যার মাথায় সরু সরু কয়েকটা ছোট ছোট ধাতব শলাকা থাকে। একটি বাড়ির সবচেয়ে উঁচু স্থানে লাগানো থাকে। এছাড়া মাটির মধ্যে 5-6 ফুট নীচে একটি ধাতব চওড়া পাত পুঁতে রাখা হয়। একটি মোটা সুপরিবাহী তার দিয়ে ওপরের দণ্ডটি এবং মাটিতে পোঁতা পাতটি যুক্ত করা হয়। এই ব্যবস্থাকে বজ্র নিরোধক বলে।
12) "অতি জোরালো বজ্র এবং জামা কাপড়ের তৈরি হওয়া ছোট তড়িৎ ফুলকি আসলে একই বিষয়"- এই কথাটি কে প্রমাণ করেন?
উঃ বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন।
Thank You
Darun darun brother
ReplyDelete👍👍👍👍👍
ReplyDelete